মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে দেশকে নতুন উচ্চতায় তোলার জন্য কাজ করতে সবাইকে শপথ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন করছি। এই উদযাপন যেন শুধু আনুষ্ঠানিকতাসর্বস্ব না হয়। জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীকে সামনে রেখে আমাদের দেশকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার নতুন করে শপথ নিতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সুবর্ণ জয়ন্তীর এই শুভক্ষণে আমাদের শপথ নিতে হবে কেউ যেন বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে না পারে। দেশের গণতান্ত্রিক এবং উন্নয়নের অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করতে না পারে। আসুন, সকল ভেদাভেদ ভুলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে আমরা বাংলাদেশকে জাতির পিতার স্বপ্নের উন্নত-সমৃদ্ধ অসাম্প্রদায়িক সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলি।’
তিনি বলেন, এবারের স্বাধীনতা দিবস অন্যান্য বছরের স্বাধীনতা দিবসের মতো নয়। এবার স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি হলো। এই দিন আনন্দে অবগাহনের দিন।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে দেশে ও বিদেশে সব বাংলাদেশিকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান। যেসব বন্ধু রাষ্ট্র, প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তি বাংলাদেশের চরম দুঃসময়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন, প্রধানমন্ত্রী তাঁদের কথা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেন।
প্রধানমন্ত্রী ‘অপারেশন সার্চলাইট’ ও পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যার কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানি সৈন্যদের হাতে বন্দি হওয়ার পূর্বমুহূর্তে ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। সমগ্র জাতিকে নির্দেশ দেন প্রতিরোধযুদ্ধের। মাতৃভূমিকে শত্রুমুক্ত করার। তাঁর ঘোষণা তৎকালীন ইপিআরের ওয়্যারলেসের মাধ্যমে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। পাকিস্তানি জান্তারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে গিয়ে কারাগারে নিক্ষেপ করে।’
তিনি বলেন, অসহযোগ আন্দোলনের এক পর্যায়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ রেসকোর্স ময়দানে ঘোষণা করেন : এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। জয় বাংলা।
advertisement
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বীর বাঙালি বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে দেশকে শত্রুমুক্ত করে। ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর অর্জিত হয় চূড়ান্ত বিজয়।
প্রধানমন্ত্রী ২৫ মার্চের কালরাতের শহীদদের পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধের জাতীয় চার নেতা, ৩০ লাখ শহীদ এবং দুই লাখ নির্যাতিত মা-বোনকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন এবং বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সালাম জানান। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘাতকদের হাতে নির্মমভাবে নিহত স্বজনদের কথাও প্রধানমন্ত্রী স্মরণ করেন।
শেখ হাসিনা বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রাম ও বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা তুলে ধরে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব নামের সেই মহাপুরুষের জন্ম হয়েছিল বলেই আজ আমরা স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের গর্বিত নাগরিক। তাঁর জন্ম হয়েছিল বলেই আজ আমরা নিজস্ব দেশ, ভাষা-সংস্কৃতি নিয়ে গর্ব বোধ করি।’
তিনি বলেন, ‘শেখ মুজিব একটি দেশ, একটি জাতি-রাষ্ট্রের স্রষ্টা। কাজেই তাঁর জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী আমরা একযোগে উদযাপন করছি।’
প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের অর্জনগুলো তুলে ধরে বলেন, ‘এগুলো সাধারণ মানুষের। এ দেশের কৃষক-শ্রমিক-পেশাজীবী, আমাদের প্রবাসী ভাই-বোনেরা, এ দেশের উদ্যোক্তারা—তাঁদের শ্রম, মেধা এবং উদ্ভাবনী শক্তি দিয়ে দারিদ্র্য নিরাময়ের অসম্ভব কাজকে সম্ভব করে তুলেছেন। আমার সরকার শুধু নীতি সহায়তা দিয়ে সহায়ক পরিবেশ তৈরি করেছে। আপনারা প্রমাণ করেছেন, বাংলাদেশের মানুষ অনুকূল পরিবেশ পেলে যেকোনো অসম্ভবকে সম্ভব করে তুলতে পারে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের বিগত ১২ বছরের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে আর্থ-সামাজিক সূচকে বাংলাদেশ অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছে। আজকের এই উত্তরণের পথ মোটেই মসৃণ ছিল না। দেশের ভেতরে-বাইরে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী শক্তি বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করতে নানা অপতৎপরতা চালিয়েছে। সে প্রক্রিয়া এখনো অব্যাহত আছে। কাজেই আমাদের সকলকে অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে দেশবিরোধী সকল অপতৎপরতা রুখে দাঁড়াতে হবে।’