স্কোরবোর্ডে তখন দ্বিতীয় ইনিংসে কিউইদের রান ২ উইকেটে ১৩৬। অথচ সেই নিউজিল্যান্ডই কিনা অলআউট হয়েছে ১৬৯ রানে। হ্যাঁ, অন্যরকম এক ম্যাচ দেখলো ক্রিকেটবিশ্ব। আর টাইগাররাও জানান দিলো, জ্বলে পুড়ে মরে ছারখার; তবু মাথা নোয়াবার নয়। এবাদত-তাসকিনের আগুনঝরা বোলিংয়ে স্বাগতকিত নিউজিল্যান্ডকে ৮ উইকেটে হারিয়ে ইতিহাস গড়লো বাংলাদেশ।
গত ১৭ ম্যাচ ধরে ঘরের মাটিতে অপরাজিত থাকা নিউজিল্যান্ড হয়তো স্বপ্নেও ভাবতে পারেনি বাংলাদেশ তাদের এমন নাকানিচুবানি খাওয়াবে। এবাদত হোসেনের ক্যারিয়ারসেরা বোলিং যে সব হিসেবনিকেশ পাল্টেই দিয়েছে।
৫ উইকেটে ১৪৭ রান নিয়ে ৪র্থ দিন পার করেছিল নিউজিল্যান্ড। ৬ রান করে অপরাজিত ছিলেন রাচিন রবীন্দ্র, ৩৭ রান করে রস টেইলর।
বাংলাদেশের গলার কাটা হয়ে বেধে থাকা রস টেইলরকে দ্রুত ফিরিয়ে ৫ উইকেট পূর্ণ করেন এবাদত। ২০১৩ সালের পর এই প্রথম বাংলাদেশি কোন পেসার টেস্টে এক ইনিংসে ৫ উইকেট পেল। ৪০ রান করা টেইলরকে বোল্ড করেন এবাদত।
এবাদত থামেননি এখানেই, নিজের পরবর্তী ওভারেই ফেরান কাইল জেমিসনকে। জেমিসন রানের খাতা ই খুলতে পারেননি, দারুণ এক ক্যাচ নিয়ে জেমিসনকে সাজঘরের পথ দেখান শরিফুল ইসলাম।
নিউজিল্যান্ডের মাটিতে বাংলাদেশি পেসার হিসাবে সেরা বোলিং ফিগার এখন এবাদত হোসেনের- ২১-৬-৪৬-৬! এর আগে সেরা ফিগার ছিল রুবেল হোসেনের- ২৯-১-১৬৬-৫।
৫ বল বাদেই ৮ম উইকেট হারায় নিউজিল্যান্ড। তাসকিন আহমেদ নিজের ২য় উইকেট তুলে নেন। উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ১৬ রান করা রাচিন রবীন্দ্র। পরবর্তী ওভারে তাসকিন নেন আরও এক উইকেট, লো ফুল টসে বোল্ড করেন টিম সাউদিকে।
তাসকিন আহমেদের ওভারে ২ টি চার মেরে কিছুটা হলেও টাইগার শিবিরে অস্বস্তি আনেন ট্রেন্ট বোল্ট। তবে দ্রুতই সে অস্বস্তি মিলিয়ে যায়। আক্রমণে এসে বোল্টকে ফেরান মেহেদী হাসান মিরাজ। ১৬৯ রানেই থামে কিউইরা। আগের দিনের সাথে মাত্র ২২ রান যোগ করে।
৪০ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই সাদমান ইসলামকে হারায় টাইগাররা। টিম সাউদির শিকার হয়ে সাজঘরে ফেরেন সাদমান। এরপরে দলপতি মুমিনুল হককে নিয়ে সাবধানে খেলতে থাকেন অপর ওপেনার নাজমুল হাসান শান্ত। তবে ৪১ বলে ১৭ রান করে জেমিসনের বলে কাটা পড়েন শান্তও। তবে অভিজ্ঞ মুশফিককে সাথে নিয়ে বাকি কাজটুকু সারেন দলপতি মুমিনুল হক। তার অপরাজিত ১৩ ও মুশফিকের ৫ রানে ১৬.৫ ওভারে ৪২ রান করে জয়ের বন্দরে পৌছে যায় বাংলাদেশ। কিউইদের হয়ে ১ টি করে উইকেট নেন সাউদি ও জেমিসন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
নিউজিল্যান্ড ১ম ইনিংসঃ ৩২৮/১০ (১০৮.১ ওভার)
ল্যাথাম ১, ইয়াং ৫২, কনওয়ে ১২২, টেইলর ৩১, নিকোলস ৭৫, ব্লান্ডেল ১১, রাচিন ৪, জেমিসন ৬, সাউদি ৬, ওয়েগনার ০, বোল্ট ৯*;
শরিফুল ২৬-৭-৬৯-৩, এবাদত ১৮-৩-৭৫-১, মিরাজ ৩২-৯-৮৬-৩, মুমিনুল ৪.১-০-৬-২
বাংলাদেশ ১ম ইনিংসঃ ৪৫৮/১০ (১৭৬.২ ওভার)
সাদমান ২২, জয় ৭৮, শান্ত ৬৪, মুমিনুল ৮৮, মুশফিক ১২, লিটন ৮৬, রাব্বি ২৬, মিরাজ ৪৭, তাসকিন ৫, শরিফুল ৭, এবাদত ০*;
সাউদি ৩৮-৪-১১৪-২, বোল্ট ৩৫.২-১১-৮৫-৪, জেমিসন ৩৫-১১-৭৮-১, ওয়াগনার ৪০-৯-১০১-৩
নিউজিল্যান্ড ২য় ইনিংসঃ ১৬৯/১০ (৭৩.৪ওভার)
ল্যাথাম ১৪, ইয়াং ৬৯, কনওয়ে ১৩, টেইলর ৪০, নিকোলস ০, ব্লান্ডেল ০, রবীন্দ্র ১৬, জেমিসন ০, সাউদি ০, ওয়াগনার ০*, বোল্ট ৮;
তাসকিন ১৪-৩-৩৬-৩, এবাদত ২১-৬-৪৬-৬, মিরাজ ২২.৪-৫-৪৩-১
বাংলাদেশ ২য় ইনিংসঃ ৪২/২ (১৬.৫ ওভার)
সাদমান ৩, শান্ত ১৭, মুমিনুল ১৩* , মুশফিক ৫*;
সাউদি ৫-২-২১-১, জেমিসন ৩.৫-১-১২-১
ফলাফলঃ বাংলাদেশ ৮ উইকেটে জয়ী।