1. admin@jationews24.com : admin :
সোমবার, ০৭ জুলাই ২০২৫, ০৪:৩০ অপরাহ্ন

বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের অন্যতম নেত্রী একাত্তরের কন্ঠযোদ্ধা : কল্যাণী ঘোষ

  • প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২২
  • ২৭৪ পড়া হয়েছে
জাতীয় নিউজ ২৪
ছবি : কল্যাণী ঘোষ / জাতীয় নিউজ ২৪
নিজস্ব প্রতিবেদক

জন্ম থেকেই পারিবারিকভাবে সাংস্কৃতিক আবহে বেড়ে উঠেছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দসৈনিক বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের অন্যতম নেত্রী শিল্পী কল্যাণী ঘোষ।

জাতীয় নিউজ ২৪

Advertisements

পৈতৃক নিবাস চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার বীনাজুরী গ্রামে হলেও জন্ম রহমতগঞ্জের প্রবাল চৌধুরী সড়কের দেওয়ানজী পুকুর লেন, চট্টগ্রামে ৫ মে ১৯৪৬ সালে।

মাত্র ৫ বছর বয়স থেকে মা লীলাবতী চৌধুরীর কাছে সঙ্গীত, অভিনয় ও নৃত্যে শিক্ষা লাভ করেন। বাবা প্রকৌশলী মনোমোহন চৌধুরীও ছিলেন সংস্কৃতিমনা মানুষ। চট্টগ্রাম বেতারে ১৯৬২ সালের ডিসেম্বরে তিনি প্রথম সঙ্গীত পরিবেশন করেন।

৭১’এর রক্তাক্ত মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে তাঁর জাদুকরী কণ্ঠ দিয়ে তিনি উজ্জীবিত করেছিলেন রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধাদের, উদ্দীপ্ত ও সংগঠিত করেছিলেন লাখ লাখ শরণার্থীসহ সাধারণ মানুষকে।

শব্দসৈনিক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণী ঘোষ চট্টগ্রামের খাস্তগীর গভঃ গার্লস হাই স্কুল থেকে ১৯৬২ সালে ম্যাট্রিকুলেশন, চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ থেকে ১৯৬৪ সালে উচ্চ মাধ্যমিক ও ১৯৬৬ সালে স্নাতক এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রথম ব্যাচে বাংলা সাহিত্যে (১৯৬৭-১৯৬৮) এমএ ডিগ্রি সম্পন্ন করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরি সায়েন্সে পড়াশোনা করেছেন একবছর। স্কুল জীবনে তিনি মুকুল ফৌজ ও গার্লস গাইডের সাথে সংযুক্ত ছিলেন।

১৯৭০ সালে চট্টগ্রাম সেন্ট প্লাসিডস হাই স্কুলে শিক্ষকতার মধ্য দিয়ে শুরু হয় তার পেশাগত জীবন।

সাবেক প্রতিমন্ত্রী, রাজনীতিবিদ সাবের হোসেন চৌধুরী ও চাকমা রাজা ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায় তাঁর ছাত্র ছিলেন।

শিল্পী কল্যাণী ঘোষের স্বামীর নাম সুরঞ্জন ঘোষ। পেশায় তিনি একজন প্রকৌশলী। শব্দসৈনিক কল্যাণী ঘোষের এক কন্যা সন্তান। নাম ইন্দ্রাণী ঘোষ শম্পা। তিনি এবি ব্যাংকের সিনিয়র এ্যাসিটেন্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট।

১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকালীন শব্দসৈনিক কল্যাণী ঘোষ ‘বাংলাদেশ তরুণ শিল্পী গোষ্ঠী’ গঠন করেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন তিনি ভারতের প্রত্যন্ত অঞ্চলে, মুক্তিবাহিনীর ক্যাম্পে, শরণার্থী শিবিরে বাংলাদেশের সপক্ষে জনমত গঠনের লক্ষ্যে সঙ্গীত পরিবেশন করেন।

মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণী ঘোষ ড. সনজীদা খাতুন, ওয়াহিদুল হক ও জহির রায়হানের নেতৃত্বে ‘বাংলাদেশ মুক্তি সংগ্রামী শিল্পী সংস্থা’য় যোগদান করার পর কলকাতার প্রখ্যাত শিল্পী অভিনেত্রি রুমা গুহ ঠাকুরতার ‘ক্যালকাটা ইয়ুথ কয়্যার’ এর সদস্য হয়ে বিভিন্ন স্থানে মুক্তিযোদ্ধাদের উজ্জীবিত ও উদ্বুদ্ধ করেছেন।

তাঁর সাথে সহশিল্পী হিসেবে সম্পৃক্ত ছিলেন তাঁর ভাই বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শব্দসৈনিক প্রবাল চৌধুরী ও উমা খান। সম্মিলিত ভাবে ইয়ুথ কয়্যার এর সদস্য হয়ে তাঁরা ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রাণিত ও উদ্বুদ্ধ করেছেন। অংশগ্রহণ করেছেন বিভিন্ন কার্যক্রমে।

বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শব্দসৈনিক শিল্পী কল্যাণী ঘোষ স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অন্যতম শব্দসৈনিক। তিনি বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনের বিশেষ গ্রেডের একজন সংগীতশিল্পী।

তিনি বিবিসি রেডিও ও টেলিভিশন, ভয়েস অব আমেরিকা ও আকাশবাণী কলকাতা কেন্দ্র থেকে সঙ্গীত পরিবেশন করেছেন।

বিবিসি রেডিও থেকে শব্দসৈনিক কল্যাণী ঘোষ ১৯৭৬ সালে সংবাদ পাঠও করেছেন কিছুদিন।
বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে তিনি নেপথ্য কন্ঠ দান করেন কয়েকটি ছবিতে।

জাতীয় নিউজ ২৪

Advertisements

তাদের পরিবারের দশ ভাই বোন সকলেই শৈশবে মা লীলাবতী চৌধুরীর কাছে সংগীত নৃত্য ও অভিনয়ে শিক্ষা গ্রহণ করেন। উচ্চাঙ্গ সংগীত ও নৃত্যের উপর তাঁর প্রশিক্ষণ আছে। তাঁদের পরিবারের সাত ভাইবোন ও ভাইয়ের স্ত্রী মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন।

বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শিল্পী কল্যাণী ঘোষ সুদীর্ঘ ৫৯ বছর যাবৎ বাংলাদেশ বেতার, টেলিভিশন ও মঞ্চে সঙ্গীত পরিবেশন করে আসছেন।

তিনি সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সদস্য হয়ে বিভিন্ন সময়ে আমেরিকা, উত্তর কোরিয়া, লন্ডন, বার্মিংহাম, ম্যানচেষ্টার, স্কটল্যান্ড ও ভারতে সঙ্গীত পরিবেশন করেছেন।

উল্লেখ্য, তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও জাতীয় সংসদের সাবেক স্পিকার হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী শিল্পী কল্যাণী ঘোষের কাছে নয় বছর সঙ্গীতের উপর তালিম নিয়েছিলেন। এবং তাঁরই আগ্রহে ও ব্যবস্থাপনায় তিনি বীর মুক্তিযোদ্ধা ভাইবোন শিল্পী কল্যাণী ঘোষ ও শিল্পী প্রবাল চৌধুরীকে আমেরিকা পাঠান।

স্বাধীনতার পর শিল্পী কল্যাণী ঘোষ বাংলা একাডেমির অফিসার পদে যোগদান করেন। বাংলা একাডেমির পাঠ্যপুস্তক, গ্রন্থাগার, বিপণন, সংস্কৃতি গবেষণা, সংকলন ও ফোকলোর বিভাগে বিভিন্ন সময়ে ৩২ বছর ধরে কাজ করেছেন তিনি।

তিনি বাংলা একাডেমিতে গুরুত্বপূর্ণ অভিধান প্রকাশের কাজে জড়িত ছিলেন। ২০০৪ সালে বাংলা একাডেমি থেকে উপপরিচালক হিসেবে তিনি অবসর গ্রহণ করেন।

প্রকাশিত গ্রন্থ ও অন্যান্যঃ
তার প্রথম লেখা প্রকাশিত হয় শিশু একাডেমির ‘শিশু’ পত্রিকায়। বাংলা একাডেমি থেকে কয়েকটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে তার। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো –
চট্টগ্রামের আঞ্চলিক গান; গণসঙ্গীত; বাংলাদেশের লেখক পরিচিতি; ছোটদের অভিধান; চরিতাভিধান ইত্যাদি।

আজীবন সদস্যঃ
বাংলা একাডেমি, চট্টগ্রাম সমিতি ঢাকা, বাংলাদেশ জাতিসংঘ সমিতি ঢাকা, ইনার হুইল ক্লাব অব ঢাকা।
তিনি বাংলাদেশ-ভারত সম্প্রীতি পরিষদ ও বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা শিল্পী সংসদের সভাপতি।

শব্দসৈনিক ও শিল্পী কল্যাণী ঘোষ তার বর্ণাঢ্য জীবনের স্বীকৃতি স্বরূপ অর্জন করেছেন দেশি বিদেশি অসংখ্য পুরস্কার ও সন্মাননা।

১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন কলকাতার কিংবদন্তি সঙ্গীতজ্ঞ মায়া সেন পূরবী দত্ত, ধীরেন বসু, হেমাঙ্গ বিশ্বাস, সুধীন দাশগুপ্ত, ভি বালসারা ও প্রখ্যাত অভিনেতা পাহাড়ি সান্যালের কাছে শব্দসৈনিক কল্যাণী ঘোষ সঙ্গীতে শিক্ষা নিয়েছেন।

এছাড়া ভারতের প্রথিতযশা শিনল্পী হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, শ্যামল মিত্র, মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়, আরতি মুখোপাধ্যায়, বনশ্রী সেনগুপ্ত প্রমুখের সঙ্গে সঙ্গীতজ্ঞ সলিল চৌধুরীর রচনা।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এই ধরণের অন্যান্য সংবাদসমূহ...


© 2020 জাতীয় নিউজ ২৪। সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত।

কারিগরি সহায়তায়- White NS

প্রযুক্তি সহায়তায় BTMAXHOST