ইউক্রেনকে রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনার ব্যাপারে সদিচ্ছার ইঙ্গিত দিতে গোপনে আহ্বান জানাচ্ছে মিত্র দেশ যুক্তরাষ্ট্র। রবিবার যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম শীর্ষ প্রভাবশালী সংবাদপত্র ওয়াশিংটন পোস্ট ‘দায়িত্বশীল সূত্রের’ বরাত দিয়ে এ খবর প্রকাশ করে।
ওয়াশিংটন পোস্ট বলেছে, প্রতিবেদনটি তৈরির জন্য বেশ কয়েকজন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির সাক্ষাত্কার নেওয়া হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নেতৃত্বাধীন প্রশাসন ইউক্রেনের নেতাদের প্রতি ইঙ্গিত দিয়েছে, কিয়েভ যেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে শান্তি আলোচনায় অনাগ্রহ না দেখায়। তবে সংশ্লিষ্ট সূত্র দাবি করে, ইউক্রেনকে রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনার টেবিলে জোর করে ঠেলে দেওয়া ওয়াশিংটনের লক্ষ্য নয়। বরং এটি খুব হিসাব-নিকাশ করে নেওয়া একটি উদ্যোগ, যার লক্ষ্য ইউক্রেনের প্রতি অন্যান্য দেশের সমর্থন বজায় রাখা। সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর জনগণ বছরের পর বছর একটি যুদ্ধের রসদ জুগিয়ে যাওয়া নিয়ে উদ্বিগ্ন।
যুক্তরাষ্ট্র সরকারের এ কথিত অবস্থানের পরিপ্রেক্ষিতে ওয়াশিংটন পোস্টের খবরে বলা হয়, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান জটিল জায়গায় পৌঁছেছে। মার্কিন কর্মকর্তারা প্রকাশ্যে বলছেন, কিয়েভকে ‘যত দিন প্রয়োজন তত দিন সহযোগিতা’ করা হবে। দেওয়া হচ্ছে বিপুল সামরিক সহায়তা। অন্যদিকে তাঁরা মনে মনে আশা করছেন, গত আট মাসের সংঘাত বন্ধের একটা পথ পাওয়া যাবে।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, মার্কিন কর্মকর্তাদের মূল্যায়নে দেখা যায়, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এখন আলোচনার ব্যাপারে তেমন তত্পর নন। এদিকে রাশিয়া ইউক্রেনের চারটি অঞ্চল যুক্ত করে নেওয়ার ঘোষণা দেওয়ার পর দেশটির প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কিও আলোচনার সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছেন। এতে ইউরোপ ছাড়াও আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকায় উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। কারণ এই যুদ্ধ বৈশ্বিক অর্থনীতিতে চাপ তৈরির মাধ্যমে খাদ্য ও জ্বালানি খাতে বড় সংকটের জন্ম দিয়েছে।
রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে এই যুদ্ধ অর্থনৈতিক ও খাদ্য সংকটের পাশাপাশি পরমাণু যুদ্ধের ঝুঁকিও তৈরি করেছে। এশিয়া থেকে আফ্রিকা পর্যন্ত যেসব দেশ রাশিয়া ও ইউক্রেনের কৃষিপণ্যের ওপর নির্ভরশীল, তাদের অবস্থা এখন বেশ নাজুক।
ওয়াশিংটন ও কিয়েভের মধ্যে স্পর্শকাতর বিষয়ে আলোচনায় যুক্ত পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, ‘ইউক্রেনের একঘেয়ে পরিস্থিতি আমাদের কিছু অংশীদারের জন্য একটি সত্যিকারের উদ্বেগ।’ এ বিষয়ে জেলেনস্কির মুখপাত্র সেরহি নিকিফোরভ কোনো মন্তব্য বা প্রতিক্রিয়া জানাননি।
ইউক্রেন যুদ্ধ যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেও একটি বড় ইস্যু হয়ে উঠেছে। আগামীকাল মঙ্গলবার অনুষ্ঠেয় কংগ্রেসের গুরুত্বপূর্ণ মধ্যবর্তী নির্বাচনের আগে কয়েকটি জরিপে দেখা গেছে, রিপাবলিকান পার্টির দিক থেকে ইউক্রেনের জন্য অর্থায়নের প্রতি সমর্থন ক্রমেই কমছে। স্নায়ুযুদ্ধের পর থেকে এ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে বছরে সর্বোচ্চ সহযোগিতা পেয়েছে ইউক্রেন। এ কারণে বাইডেনের ডেমোক্র্যাট দল মধ্যবর্তী নির্বাচনে বড় ধাক্কা খেতে পারে বলে জরিপে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।
রাশিয়ায় নিযুক্ত ওয়াশিংটনের সাবেক রাষ্ট্রদূত এবং ন্যাটো সামরিক জোটের সাবেক উপমহাসচিব আলেক্সান্দার ভার্শবো বলেন, ‘পরিস্থিতি আলোচনার জন্য আরো অনুকূল হয়ে উঠলে আমি মনে করি না যে মার্কিন কর্তৃপক্ষ নিষ্ক্রিয় থাকবে।’ ভার্শবো বলেন, ইউরোপের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং ক্রেমলিনের আগ্রাসনের সীমা আরো বিস্তৃত হওয়া ঠেকাতে মার্কিন স্বার্থের কথা বিবেচনা করলে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে এ যুদ্ধ শেষ হওয়ার পদ্ধতি ও সময়সীমা নিয়ে নিস্পৃহ থাকার অবকাশ নেই।
সূত্র : ওয়াশিংটন পোস্ট