জাতীয় নিউজ ২৪ | অনলাইন ডেস্ক
অধ্যাপক ডা. নুরুল আনোয়ার ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক। করোনায় আক্রান্ত হয়ে গত আগস্টে মৃত্যুর আগে তিনি চিকিৎসার জন্য ঘুরেছেন একে একে তিনটি হাসপাতালে। সরকারি থেকে দাতব্য হয়ে শেষে জায়গা পেয়েছিলেন একটি বেসরকারি হাসপাতালে। সরকারের একাধিক সাবেক অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম সচিব থেকে সাধারণ বয়স্ক অনেকের ভাগ্যেই জুটেছে এমন মৃত্যু। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে জেরিয়াট্রিক ট্রিটমেন্ট কার্যকর থাকলে এ ধরনের ভোগান্তি এড়ানো যেত। অনেকের মৃত্যুও ঠেকানো যেত।
জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও করোনায় আক্রান্তদের মধ্যে মৃত্যুর ঝুঁকি বেশি পঞ্চাশোর্ধ্ব বয়সীদের। দেশে এ পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত হয়ে যাদের মৃত্যু হয়েছে তাদের ৭৮ শতাংশের বয়সই ৫০ বছরের ওপরে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ৫১.২৭ শতাংশের বয়স ষাটোর্ধ্ব। আর ৫১-৬০ বছর বয়সী ২৬.৮২ শতাংশ। এসব মৃত্যুর বেশির ভাগই ঘটেছে হাসপাতালে। এখনো করোনা আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে আসা রোগীদের বড় অংশই পঞ্চাশোর্ধ্ব বয়সের। তাদের মধ্যে আবার বেশির ভাগেরই অন্যান্য রোগের জটিলতা রয়েছে। বিশেষ করে ষাটোর্ধ্বদের ক্ষেত্রে বার্ধক্যজনিত রোগের কারণে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর অবস্থা দ্রুত অবনতির ঝুঁকি বেশি থাকে।
করোনায় মৃত্যুর সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে থাকা এসব বয়স্ক মানুষের সমন্বিত উন্নত চিকিৎসার সুযোগ একেবারেই সীমিত। বিশেষায়িত হাসপাতালগুলোতেও তাদের জন্য পৃথক কোনো ব্যবস্থাপনা গড়ে ওঠেনি। প্রবীণ হিতৈষী সংঘের একটি হাসপাতাল আর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে জেরিয়াট্রিক চিকিৎসাসেবার যৎসামান্য ব্যবস্থা থাকলেও সেখানে করোনা আক্রান্তদের জন্য বিশেষ কোনো সুযোগ রাখা হয়নি। বরং বয়স্ক রোগীদের চিকিৎসা চলে অন্য সব বয়সী রোগীদের মধ্যেই। ফলে অনেক ক্ষেত্রে অন্যদের মাধ্যমে অপেক্ষাকৃত কম ইমিউনিটি সম্পন্ন বয়স্করা আরো ঝুঁকিতে পড়ে। এ ক্ষেত্রে করোনাজনিত চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় বয়স্ক রোগীদের অগ্রাধিকারভিত্তিক বিশেষায়িত চিকিৎসার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
ইউজিসি অধ্যাপক ও প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ কালের কণ্ঠকে বলেন, করোনায় বয়স্করা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছে। আসছে শীতে তাদের এই ঝুঁকি আরো বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কিন্তু সেই অনুসারে বয়স্কদের জন্য আলাদা কোনো ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। এ ক্ষেত্রে জেরিয়াট্রিক ইউনিটগুলো কার্যকর করা জরুরি। সেখানে শুধুই বয়স্কদের অগ্রাধিকারভিত্তিক বিশেষায়িত চিকিৎসা চলবে।
ডা. আব্দুল্লাহ আরো বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকার সময় একটি জেরিয়াট্রিক বিভাগ চালু করেছিলাম। তবে শুধু বিভাগ চালু করলেই তো হবে না; এ জন্য দক্ষ ও প্রশিক্ষিত চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য স্টাফ দরকার। পর্যাপ্ত বিশেষায়িত বেড এবং যন্ত্রপাতিও অপরিহার্য। ঢাকার সব বড় হাসপাতালসহ অন্ততপক্ষে সব মেডিক্যাল কলেজে কার্যকর একটি করে জেরিয়াট্রিক ইউনিট চালু করা জরুরি। জেরিয়াট্রিক ইনস্টিটিউশনকেও শক্তিশালী করা প্রয়োজন।’
বয়স্বী কল্যাণ সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ডা. আফসানা করিম বলেন, ‘আমরা সবাই জানি যে এখন বয়স্করা সবচেয়ে ঝুঁকিতে। কিন্তু আমাদের জন্য পৃথক ব্যবস্থাপনা দেশে এখনো গড়ে ওঠেনি। হাতে গোনা দুই-একটি প্রতিষ্ঠানে নামমাত্র কয়েকটি বেড বা ইউনিট চালু থাকলেও সেখানে বাস্তবে জেরিয়াট্রিক সেবার জন্য উপযুক্ত কোনো ব্যবস্থা নেই। তা আমরা করোনাকালে হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি। অনেক বয়স্ক করোনা রোগী হাসপাতালে ঠেলাঠেলির শিকার হয়েছে। হাসপাতালগুলোতে তাদের চিকিৎসার জন্য অন্যদের মতোই সাধারণ মানের সেবা চলছে। কিন্তু ষাটোর্ধ্ব কোনো রোগীর সমস্যা আর একজন তরুণের সমস্যা যেমন এক নয়, তেমনি চিকিৎসাও একইভাবে করলে চলবে না। বয়স্কদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা রাখতেই হবে।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল) ডা. ফরিদ উদ্দিন মিয়া বলেন, হাসপাতালগুলোতে বয়স্কদের জন্য এখনো ঠিক আলাদা কোনো চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা যায়নি। তবে তাদের অগ্রাধিকার দেওয়ার জন্য সব হাসপাতালকে নির্দেশ দেওয়া আছে।