অনলাইন ডেস্ক
আমেরিকার প্রথম মহিলা ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত কমলা হ্যারিস।
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হেরে গেলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। জয় আসবেই ধরে নিয়ে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত দাঁতে দাঁত কামড়ে পড়েছিলেন তিনি। একের পর এক রাজ্যে ধাক্কা খেলেও, ভোট পুনর্গণনার দাবিতে অনড় ছিলেন। কিন্তু পেনসিলভেনিয়ার দৌলতে শেষ মুহূর্তে তাঁর মুখের গ্রাস ছিনিয়ে নিলেন জো বাইডেন। তাই দ্বিতীয় বার আর হোয়াইট হাউসের দখল নেওয়া হল না ট্রাম্পের। ৪৬তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে তাঁর জায়গায় বাইডেনকেই বেছে নিলেন আমেরিকার সাধারণ মানুষ।
২৫৩ ইলেক্টরাল ভোট নিয়ে শনিবারও শুরু থেকেই এগিয়ে ছিলেন জো বাইডেন। ট্রাম্পের সপক্ষে ভোট ছিল ২১৪। জর্জিয়ায় ভোট পুনর্গণনার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর আশায় বুক বাঁধতে শুরু করে ট্রাম্প শিবির। ডেমোক্র্যাটদের গড় হিসেবে পরিচিত পেনসিলভেনিয়ার দিকেই তাকিয়ে ছিলেন বাইডেন ও তাঁর সমর্থকরা। তাঁরা জানতেন, সেখানে ২০টি ইলেক্টরাল ভোট জিতে নিতে ট্রাম্পের আর কিছু করার থাকবে না। শেষ মেষ তাই হল। পেনসিলভেনিয়াই বাইডেনকে জয় এনে দিল।
একই সঙ্গে এ দিন আমেরিকায় ইতিহাস গড়লেন ভারতীয বংশোদ্ভূত কমলা হ্যারিস। সে দেশের প্রথম মহিলা ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেন তিনি। এর আগে যদিও ডেমোক্র্যাটদের হয়ে বাইডেনের সঙ্গেই প্রতিদ্বন্দিতায় নেমেছিলেন কমলা। তবে পরবর্তী কালে ভাইস প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিসেবে তাঁকেই বেছে নেন বাইডেন।
এ দিন জয় হাসিল করার পর একটি বিবৃতি প্রকাশ করে বাইডেন বলেন, ‘কমলা হ্যারিস এবং আমার উপর সাধারণ মানুষ যে আস্থা রেখেছেন, তাতে সম্মানিত বোধ করছি। নানা বাধা বিপত্তি সত্ত্বেও রেকর্ড সংখ্যাক মানুষ ভোট দিয়েছেন। এতেই প্রমাণ হয় আমেরিকার হৃদয়ের গভীরে গণতন্ত্রই স্পন্দিত হয়। নির্বাচনী প্রচার শেষ হয়ে গিয়েছে। তাই সমস্ত রাগ-অভিমান পিছনে ফেলে একজোট হওয়ার সময় এসেছে। আমেরিকাকে একজোট হতে হবে, ক্ষত সারিয়ে উঠতে হবে। আমরা আমেরিকার মানুষ। আমাদের অসাধ্য কোনও কাজ নেই’।
জয় নিশ্চিত করে টুইটারে কমলা হ্যারিস লেখেন, ‘জো বাইডেন বা আমি নই, এ বারের নির্বাচনের গুরুত্ব অনেক বেশি। এর সঙ্গে আমেরিকার আত্মা জড়িয়ে রয়েছে। জড়িয়ে রয়েছে একসঙ্গে লড়াই করার অদম্য জেদ। সামেন অনেক কাজ। চলুন পথ চলা শুরু করি’।
This election is about so much more than @JoeBiden or me. It’s about the soul of America and our willingness to fight for it. We have a lot of work ahead of us. Let’s get started.pic.twitter.com/Bb9JZpggLN
— Kamala Harris (@KamalaHarris) November 7, 2020
বাইডেন এবং কমলাকে অভিনন্দন জানিয়ে এ দিন টুইট করেন প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। একটি বিবৃতি প্রকাশ করে তিনি লেখেন, ‘বন্ধুবর জো বাইডেন এবং কমলা হ্যারিস, আমাদের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট এবং ভাইস প্রেসিডেন্টকে অভিনন্দন’।
Congratulations to my friends, @JoeBiden and @KamalaHarris — our next President and Vice President of the United States. pic.twitter.com/febgqxUi1y
— Barack Obama (@BarackObama) November 7, 2020
প্রাক্তন মার্কিন বিদেশ সচিব তথা গতবারে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন যে হিলারি ক্লিন্টন, তিনিও বাইডেন এবং কমলাকে অভিনন্দন জানান। টুইটারে হিলারি লেখেন, ‘ভোটাররাই জবাব দিয়েছেন। আমাদের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে জো বাইডেন এবং কমলা হ্যারিসকে বেছে নিয়েছেন তাঁরা। এটা ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত, ট্রাম্পকে প্রত্যাখান করেছেন মানুষ, নতুন আমেরিকার যাত্রা শুরু। যাঁরা এই ঐতিহাসিক পরিবর্তনে সাহায্য করেছেন, তাঁদের সকলকে ধন্যবাদ’।
The voters have spoken, and they have chosen @JoeBiden and @KamalaHarris to be our next president and vice president.
It's a history-making ticket, a repudiation of Trump, and a new page for America.
Thank you to everyone who helped make this happen. Onward, together. pic.twitter.com/YlDY9TJONs
— Hillary Clinton (@HillaryClinton) November 7, 2020
I WON THIS ELECTION, BY A LOT!
— Donald J. Trump (@realDonaldTrump) November 7, 2020
তবে নির্বাচনী ফল ঘোষণা হয়ে যাওয়ার পরও নিজের অবস্থানে অনড় ট্রাম্প। পেনসিলভেনিয়ায় গণনা সম্পূর্ণ হওয়ার পর ডেমোক্র্যাট শিবির যখন উচ্ছ্বাস দেখাতে শুরু করেছে, সেইসময় তিনি বলেন, ‘‘প্রেসিডেন্ট হিসেবে মিথ্যে নিজেকে মেলে ধরতে দৌড়চ্ছেন বাইডেন’’। তার এক ঘণ্টা আগে যদিও টুইটারে ট্রাম্প লেখেন, ‘এই নির্বাচনে আমিই জয়ী হয়েছি, অনেক কিছুর নিরিখেই’। ভোট পুনর্গণনার দাবি নিয়ে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত আইনি লড়াইয়ে মুখিয়ে ছিলেন ট্রাম্প। পেনসিলভেনিয়ায় যে ভাবে বাইডেন এগিয়ে যাচ্ছিলেন, তা দেখেই শেষ মুহূর্তে তিনি ওই টুইট করেন বলে জল্পনা আমেরিকার রাজনৈতিক মহলে। তবে ট্রাম্প বা তাঁর শিবিরের কেউ এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি।