সিলেট-৩ আসনের উপনির্বাচনে ভোট গ্রহণ আজ শনিবার। সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে ভোট গ্রহণ চলবে। তবে কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি ও সুষ্ঠু ভোট নিয়ে জনমনে সন্দেহ রয়েছে। যদিও প্রশাসন শুরু থেকেই শান্তিপূর্ণ ভোটের আশ্বাস দিয়ে আসছে। নির্বাচন কমিশন থেকেও শুক্রবার (৩ সেপ্টেম্বর) বলা হয়েছে যে সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে সার্বিক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
সিলেটের দক্ষিণ সুরমা, বালাগঞ্জ ও ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা নিয়ে সিলেট-৩ আসন। গত তিনটি সংসদ নির্বাচনে আসনটি আওয়ামী লীগের দখলে ছিল। এর আগে দুইবার নির্বাচিত হন বিএনপির প্রার্থী। তার আগে তিনবার দখলে ছিল জাতীয় পার্টির। এবার এই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নতুন। বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নিলেও এই আসনে বিএনপির আগের দুইবারের সংসদ সদস্য স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। জাতীয় পার্টিও নিজস্ব প্রার্থী দিয়েছে। এই তিন দলের বাইরে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন বাংলাদেশ কংগ্রেস দলের একজন।
নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা চার প্রার্থী হচ্ছেন—আওয়ামী লীগের হাবিবুর রহমান হাবিব, জাতীয় পার্টির আতিকুর রহমান আতিক, বিএনপি দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য শফি আহমদ চৌধুরী ও বাংলাদেশ কংগ্রেসের জুনায়েদ মোহাম্মদ মিয়া।
সিলেট-৩ আসনে ভোটারসংখ্যা তিন লাখ ৪৯ হাজার ৮৭৩। আজ ১৪৯টি কেন্দ্রে ভোটাররা ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। সুষ্ঠুভাবে ভোট অনুষ্ঠানে সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। গতকাল বিকেলে ইভিএমসহ নির্বাচনী সরঞ্জাম প্রতি কেন্দ্রে পৌঁছানো হয়েছে। তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন এই উপনির্বাচনের সহকারী রিটার্নিং অফিসার ও ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাখী আহমেদ।
এদিকে সুষ্ঠু ও নিরাপদ ভোট গ্রহণে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। নির্বাচনী এলাকার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশের পাশাপাশি র্যাব ও বিজিবি সদস্য নিয়োগ করা হয়েছে। কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে তিন উপজেলায় তিনজন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও প্রতি ইউনিয়নে একজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
সিলেট জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গণমাধ্যম) লুত্ফুর রহমান জানান, বালাগঞ্জ ও ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলায় আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে জেলা পুলিশের সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন। প্রতিটি কেন্দ্রে একজন উপপরিদর্শক, একজন অতিরিক্ত উপপরিদর্শক ও চারজন কনস্টেবল নিয়োজিত থাকবেন। তবে কেন্দ্রের গুরুত্ব বিবেচনায় কনস্টেবল সংখ্যা বেশি হতে পারে। এ ছাড়া প্রতি দুই বা তিনটি কেন্দ্রের জন্য একটি মোবাইল টিম থাকবে। পাশাপাশি স্ট্রাইকিং ফোর্স ও র্যাব-বিজিবির সদস্যরা দায়িত্বে থাকবেন।
জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং অফিসার এম. কাজী এমদাদুল ইসলাম জানান, প্রতিটি উপজেলায় একজন করে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে নির্বাচন মনিটরিংয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। যাবতীয় প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। নির্বাচন গ্রহণযোগ্য করতে সংশ্লিষ্ট সবাই কাজ করবেন।’
এদিকে সব প্রস্তুতি শেষ হলেও জয়-পরাজয় নিয়ে নানা হিসাব-নিকাশ রয়েছে। কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি নিশ্চিত করাটা বড় চ্যালেঞ্জ হবে বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ প্রার্থীরা নির্বাচনী মাঠ চষে বেড়ালেও ভোটারদের মধ্যে আগ্রহ অনেকটাই কম। তা ছাড়া নীরব ভোটাররা জয়-পরাজয়ে বড় ফ্যাক্টর হবেন বলে মনে করা হচ্ছে। প্রভাবশালী তিন প্রার্থীই নিজেদের জয়ের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করলেও ভোটারদের নীরবতায় তাঁরা উত্কণ্ঠায় আছেন।
স্থানীয়রা জানান, গত দুটি জাতীয় নির্বাচন নিয়ে ভোটারদের অভিজ্ঞতা ভালো না। গত দুই জাতীয় নির্বাচনেই ভোটকেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি ছিল খুব সামান্য। তার মধ্যে এটি আবার উপনির্বাচন। এতে বিএনপিসহ বড় কয়েকটি রাজনৈতিক দল অংশ নিচ্ছে না। ফলে সাধারণ মানুষ এই নির্বাচন নিয়ে তেমন আগ্রহী নয়। ভোটারদের কেন্দ্রে উপস্থিত করানোই হবে প্রার্থীদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। যে প্রার্থী নিজের বেশিসংখ্যক ভোটার কেন্দ্রে হাজির করাতে পারবেন তিনি এগিয়ে যাবেন লড়াইয়ে।
আতিকুর রহমান আতিক বলেন, ‘মানুষের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ আছে। এখন দায়িত্ব নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনের। ভোটারদের মধ্যে আস্থা তৈরি করতে হবে। অনেকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে কেন্দ্রে না আসতে ভোটারদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। এমন ভীতিকর পরিবেশ তৈরি করলে তো মানুষ ভোট দিতে আসবে না।’
স্বতন্ত্র প্রার্থী শফি আহমদ চৌধুরী বলেন, ‘উপযুক্ত পরিবেশ পেলে জনগণ অবশ্যই ভোটকেন্দ্রে আসবে। মানুষ তাদের রায় জানাতে চায়। কিন্তু মানুষ যদি দেখে তারা ভোট দিলেও তাদের রায় ছিনিয়ে নেওয়া হবে, তাহলে তারা কেন্দ্রে আসবে না।’
হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে মানুষের মধ্যে বিপুল উত্সাহ রয়েছে এবং ভোটের পরিবেশও খুব ভালো। আমি যেখানেই গিয়েছি বিপুল সাড়া পেয়েছি। আশা করছি ভোটের দিনও তা অব্যাহত থাকবে।’
প্রসঙ্গত, গত ১১ মার্চ করোনা আক্রান্ত হয়ে এই আসনের সংসদ সদস্য মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর মৃত্যু হয়। এরপর ১৫ মার্চ আসনটি শূন্য ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন।