একদিকে রাশিয়া তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের হুমকি দিচ্ছে, অন্যদিকে ইউক্রেনের বেসামরিক নাগরিকদের সরিয়ে নিতে জাতিসংঘকে সহায়তা করার কথাও বলছে।
রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ মঙ্গলবার রাজধানী মস্কোয় জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের সঙ্গে পূর্বনির্ধারিত বৈঠক করেন। ওই বৈঠকের আগে লাভরভ পশ্চিমাদের উদ্দেশে বলেন, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের ‘মারাত্মক ঝুঁকি’ তৈরি হয়েছে। ‘এটা বাস্তব, আপনারা সেটাকে খাটো করে দেখতে পারেন না,’ বলেন তিনি।
ইউক্রেনে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ শুরু করার পর থেকে পশ্চিমা মিত্রদের কাছ থেকে অস্ত্র সহায়তা চেয়ে আসছে কিয়েভ নেতৃত্ব। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কির সেই আহ্বানে সাড়া দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ ন্যাটোর কয়েকটি সদস্য দেশ সেখানে অস্ত্র পাঠাচ্ছে। পশ্চিমাদের এই পদক্ষেপের প্রতিক্রিয়ায় ‘তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের ঝুঁকি বাস্তব’ বলে সতর্ক করেন শীর্ষ রুশ কূটনীতিক। ইউক্রেনের কারণে শান্তি আলোচনা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
এদিকে লাভরভের সঙ্গে বৈঠকের শুরুতেই যুদ্ধ বন্ধের বিষয়টি সামনে আনেন জাতিসংঘের প্রধান গুতেরেস। তিনি বলেন, ‘কার্যকর আলোচনার পরিবেশ তৈরি, যত শিগগির সম্ভব যুদ্ধবিরতির পরিবেশ তৈরি এবং শান্তিপূর্ণ সমাধানের পরিবেশ সৃষ্টির পথ খুঁজে পেতে আমরা অত্যন্ত আগ্রহী।’
এ ছাড়া বৈঠক শেষে করা যৌথ সংবাদ সম্মেলনে গুতেরেস ইউক্রেনে আটকে পড়া বেসামরিক নাগরিকদের জন্য নিরাপদ করিডর নিশ্চিত করা এবং সে জন্য যুদ্ধবিরতি কার্যকর করার কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘জরুরি ভিত্তিতে আমাদের এমন মানবিক করিডর দরকার, যেগুলো সত্যিই নিরাপদ ও কার্যকর।’ ইউক্রেনের অবরুদ্ধ এলাকাগুলো থেকে বেসামরিক লোকজনকে সরিয়ে নিতে নিরাপদ মানবিক করিডর খোলার জন্য ইউক্রেন, রাশিয়া ও জাতিসংঘের একটি ‘কন্টাক্ট গ্রুপ’ গঠন করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে বলে জানান গুতেরেস।
জবাবে লাভরভ বলেন, ‘বেসামরিক লোকজনকে রক্ষা করা আমাদের প্রধান লক্ষ্য। আর বেসামরিক লোকজনের দুর্ভোগ লাঘবের জন্য আমরা আমাদের জাতিসংঘ সহকর্মীদের সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।’ তিনি আরো বলেন, শান্তি আলোচনার মাধ্যমে ইউক্রেন যুদ্ধের সমাধানের পক্ষেই রাশিয়ার অবস্থান, কিন্তু প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি ও কিয়েভ প্রতিনিধিদের আচরণ ‘হতাশাজনক’।
এদিকে সংবাদ সম্মেলনে গুতেরেস ইউক্রেনে যুদ্ধাপরাধ হয়েছে কি না, তা তদন্তের আওতায় আনার কথা বলেন। ‘বারবার আন্তর্জাতিক মানবিক ও মানবাধিকার আইন লঙ্ঘন এবং সম্ভাব্য যুদ্ধাপরাধের খবরে আমি উদ্বিগ্ন। সে ক্ষেত্রে কার্যকর জবাবদিহি নিশ্চিত করার জন্য সেসব অভিযোগের ব্যাপারে স্বাধীন হওয়া জরুরি,’ বলেন জাতিসংঘের প্রধান।