ফিনল্যান্ড এবং সুইডেনের পশ্চিমা ন্যাটো জোটে যোগ দেওয়ার উদ্যোগ গতি পাওয়ায় আবারও সতর্কবাণী উচ্চারণ করলেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তিনি বলেছেন, দেশদুটির সঙ্গে রাশিয়ার কোনো বিরোধ নেই। তবে তাদের ভূখণ্ডে সামরিক অবকাঠামোর সম্প্রসারণ করা হলে মস্কোর তরফ থেকে ‘প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হবে’।
প্রতিবেশী সুইডেন ও ফিনল্যান্ড দীর্ঘদিনের সামরিক নিরপেক্ষতার অবসান ঘটিয়ে ন্যাটো জোটে যোগ দেবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সুইডেন সরকার পার্লামেন্টে আলোচনার পর সোমবারই আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবে বলে কথা।
অন্যদিকে ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী রবিবার রাতেই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন। দেশ দুটি বলেছে, ইউক্রেনের ঘটনাপ্রবাহ তাদের জনগণ ও নেতৃত্বের মধ্যে ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার বিষয়ে মতৈক্য সৃষ্টি করেছে।
স্ক্যান্ডিনেভীয় দেশ দুটি ন্যাটোতে যোগদানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করার পর প্রেসিডেন্ট পুতিন নতুন করে এ সতর্কতা উচ্চারণ করলেন। পুতিনসহ রুশ কর্মকর্তারা আগে থেকেই দুই প্রতিবেশীকে ন্যাটোতে যোগ দেওয়া ভুল হবে বলে সাবধান করে দিয়ে আসছিলেন।
প্রসঙ্গত, মূলত ইউক্রেনের ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার আগ্রহের জেরেই সেখানে বিশেষ সামরিক অভিযান চালিয়েছে রাশিয়া। আবার ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিই সুইডেন ও ফিনল্যান্ডকে ন্যাটোর সঙ্গে যুক্ত হতে উৎসাহিত করেছে।
Advertisements
রাশিয়ার রাজধানী মস্কোতে রুশ নেতৃত্বাধীন যৌথ নিরাপত্তা চুক্তি সংস্থার (সিএসটিও) শীর্ষ সম্মেলনে সোমবার ন্যাটো সম্প্রসারণের বিষয়ে বক্তব্য দিতে গিয়ে পুতিন বলেন, ‘ফিনল্যান্ড এবং সুইডেনের ন্যাটোতে যাওয়ার বিষয়টি রাশিয়ার জন্য একটি সমস্যা। এটি যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ হাসিল করবে।’
পুতিন আরো বলেন, বিশ্বব্যাপী প্রভাব বাড়ানোর জন্য ন্যাটোর পরিকল্পনার বিষয়ে রাশিয়াকে আরো মনোযোগ দিতে হবে।
এর আগে গতকালই রুশ প্রেসিডেন্টের দপ্তর ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, রাশিয়া সুইডেন ও ফিনল্যান্ডের ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার তৎপরতার ওপর ঘনিষ্ঠভাবে নজর রাখছে। পেসকভ বলেন, তিনি নিশ্চিত ন্যাটোতে তাদের যোগদান ইউরোপের নিরাপত্তা জোরদার করবে না।
পেসকভ বলেন, ‘এটি একটি গুরুতর বিষয়। এটি এমন ইস্যু যা আমাদের উদ্বিগ্ন করেছে। আমরা সতর্কভাবে এর ওপর নজর রেখে যাব।’ ক্রেমলিন মুখপাত্র আরো বলেন, ইউক্রেনের মতো ফিনল্যান্ড ও সুইডেনের সঙ্গে রাশিয়ার কোনো ভূখণ্ডগত বিরোধ নেই।
ন্যাটো বা উত্তর আটলান্টিক চুক্তি সংস্থা হচ্ছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯৪৯ সালে গঠিত একটি সামরিক জোট। বিশ্বযুদ্ধের মিত্র যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যসহ ১২টি দেশ নিয়ে এই জোট গঠিত হয়েছিল। তখন থেকে দিনে দিনে এটি সম্প্রসারিত। ফিনল্যান্ড এবং সুইডেন যোগ দিলে মোট সদস্য হবে ৩২।
চুক্তি অনুযায়ী কোনো ন্যাটো সদস্য হামলার শিকার হলে অন্যরা তার সাহায্যে এগিয়ে আসবে। ন্যাটোর মূল লক্ষ্য ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপে কমিউনিস্ট রাশিয়ার সম্প্রসারণ প্রতিরোধ করা।