যুদ্ধের ময়দানে আরো একবার পিছু হটেছে ইউক্রেন, এগিয়েছে রাশিয়া। লিসিচানস্কে যে প্রবল লড়াই হবে বলে ধরে নেওয়া হয়েছিল, তা আর হয়নি। ফলে গোটা লুহানস্ক প্রদেশ চলে গেছে রাশিয়ার দখলে।
লুহানস্ক অঞ্চলের গভর্নর সেরহি হাইদাই বলেছেন, ‘রাশিয়া এখন কামান ও গোলাবারুদে এগিয়ে রয়েছে। তারা দূর থেকেই শহর ধ্বংস করে দিত। এ কারণে সেখানে অবস্থান করে কোনো লাভ হতো না।’
ইউক্রেনের দনবাস অঞ্চলে রাশিয়ার এ অগ্রযাত্রা যুদ্ধরত দুই পক্ষের জন্য কী অর্থ বহন করছে, তা নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। বর্তমান পরিস্থিতি গোটা যুদ্ধে কী প্রভাব ফেলছে, পর্যবেক্ষকরা ভাবছেন সেটা নিয়েও।
এই মুহূর্তে ইউক্রেনের কাছে যুদ্ধের মানে হলো নিজেদের ক্ষয়ক্ষতি যতটা সম্ভব কমিয়ে রাখা এবং রাশিয়ার অগ্রগতি দীর্ঘায়িত করা। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কি স্পষ্টভাবেই বলেছেন, ‘আমরা এই দেয়াল আবার গড়ে তুলব, ভূমি আবার দখলে নিব, কিন্তু সবার আগে অবশ্যই মানুষকে বাঁচাতে হবে।’
লুহানস্কের গভর্নর সেরহি হাইদাই অনেকটা একই কথা বলছেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের সেনারা আরো সুরক্ষিত অবস্থানে সরে এসেছে…আমরা লুহানস্কের প্রতিরক্ষা পাঁচ মাস ধরে রেখেছি। ওই প্রতিরক্ষা ধরে রাখার সময় আমরা দোনেত্স্ক অঞ্চলের জন্য নতুন সুরক্ষা গড়ে তুলেছি। সেনারা এখন সেখানে সরে গেছে।’
ইউক্রেনের প্রেসিডেনশিয়াল উপদেষ্টা ওলেকসি আরেস্তাভিচ আরো একধাপ এগিয়ে লিসিচানস্ক ও সেভেরোদোনেেস্ক ইউক্রেনীয় বাহিনীর ব্যর্থ প্রতিরক্ষাকে ‘সফল সামরিক অভিযান’ আখ্যা দিয়েছেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ইউক্রেন নিজেদের সফলতা বিচার করছে কালক্ষেপণের বিবেচনায়। ইউক্রেনের প্রতিরোধের প্রায় পুরোটাই নির্ভর করছে পশ্চিমের অস্ত্র সরবরাহের ওপর। এরই মধ্যে দেশটিতে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন পশ্চিমা মিত্রদের অস্ত্র ও অন্যান্য সহায়তা পৌঁছেছে। আসছে আরো মার্কিন অস্ত্র। এসব সহায়তা নিয়েও ইউক্রেন একের পর এক শহর খোয়াচ্ছে রাশিয়ার কাছে। দীর্ঘ সময় প্রতিরোধ ধরে রেখে শেষ পর্যন্ত পিছু হটা আর পরবর্তী অবস্থান নিয়ে বাগাড়ম্বরেই যুদ্ধের গুরুত্বপূর্ণ সময় পার করছে কিয়েভ। কোনো কারণে পশ্চিমা রশদ সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেলে আরো বেশি সমস্যায় পড়বেন ইউক্রেনের সেনারা। তবে পশ্চিমা অস্ত্র সরবরাহ বাড়লে পরিস্থিতি কী দাঁড়াবে, তা এখনো দেখার অপেক্ষায় পর্যবেক্ষকরা।
ইউক্রেনের পর্যুদস্ত অবস্থার বিপরীতে রাশিয়া লক্ষ্য অর্জনে এগিয়ে যাচ্ছে। তারা আগে থেকেই নিজেদের লক্ষ্য জানিয়ে রেখেছে আর তা হলো ‘দনবাসের মুক্তি’। পর্যবেক্ষকদের মতে, গোটা লুহানস্কের দখল নেওয়া মানে সে লক্ষ্যে রাশিয়ার আরেক ধাপ এগিয়ে যাওয়া।
বর্তমান পরিস্থিতিতে পর্যবেক্ষকদের কাছে এটা অনেকটাই পরিষ্কার যে রুশ বাহিনী দনবাসের বাকিটা দখলে নিতে চেষ্টা করবে। বিশেষ করে স্লোভিয়ানস্ক ও ক্রামাতোরস্ক। দুই জায়গায়ই সাম্প্রতিক সময়ে গোলাবর্ষণ করেছে রাশিয়া। এর মধ্যে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের আন্দোলনের দিক থেকে স্লোভিয়ান্সকের আলাদা গুরুত্ব রয়েছে। ২০১৪ সালে ওই স্থানটি থেকেই বিদ্রোহ প্রথম শুরু হয়েছিল।
রাশিয়ার সামরিক কৌশলের বিস্তারিত জানা না গেলেও লড়াই যে চলবে, সেটা স্পষ্ট হয়ে গেছে গত সোমবার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের নির্দেশে। নিজের সেনাবাহিনীকে ‘অবশ্যই’ লড়াই চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
রুশ বাহিনী গোটা দনবাস দখলে নিতে পারলে বা দখলে নেওয়ার পর কী হবে, তা অনেকটাই নির্ভর করবে ওই সময় রুশ সেনাদের অবস্থার ওপর। তারা ইতিবাচক অবস্থানে থাকলে ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলজুড়ে অভিযান চালানো হতে পারে। তবে পরিস্থিতি অনুকূলে না থাকলে রাশিয়ার ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ সমাপ্ত ঘোষণা করার সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দিচ্ছেন না পর্যবেক্ষকরা। সব মিলিয়ে যুদ্ধ যে শিগগির শেষ হচ্ছে না, সেটা তাঁরা নিশ্চিত।