ঢাকার গণপরিবহনে নারীদের চলাচল নিরাপদ করার লক্ষ্যে সিসি ক্যামেরা স্থাপন কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়েছে। দীপ্ত ফাউন্ডেশনের আর্থিক সহযোগিতায় গণপরিবহনে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে মহিলা ও শিশু মন্ত্রণালয়।
রবিবার (১৬ অক্টোবর) সকালে মিরপুরের সৈয়দ নজরুল ইসলাম কনভেনশন সেন্টারে এই কার্যক্রম উদ্বোধন করেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা।
উদ্বোধনের পর প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা বলেন, “ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা (সিসি) স্থাপনের মাধ্যমে গণপরিবহন নারীবান্ধব ও নিরাপদ হবে। নারীরা সিসি ক্যামেরা সংযুক্ত বাসে উঠতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবেন।”
তিনি বলেন, “সিসি ক্যামেরা থাকায় এসব বাসের সাধারণ যাত্রীরাও সতর্ক থাকবে এবং তাদের মাঝে সচেতনতা তৈরি হবে। নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পর্যায়ক্রমে সকল বাসে সিসি টিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হবে। সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনের ফলে নারীরা ৯৯৯ ও ১০৯ এর মাধ্যমে অভিযোগ জানাতে পারবেন। হয়রানি বা নির্যাতনের ঘটনা ঘটলে সিসিটিভির ফুটেজ আদালতে আলামত ও প্রমাণ হিসেবে ব্যবহৃত হবে।”
প্রতিমন্ত্রী বলেন, “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের নারীবান্ধব বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণের ফলে শিক্ষা, কর্মক্ষেত্রসহ সকল ক্ষেত্রে নারীর পাদচারণা বেড়েছে বহুগুণ। এর ফলে নারীকে প্রতিদিন কর্মস্থলে ও স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে হয়।”
তিনি বলেন, “নারীরা গণপরিবহনের মাধ্যমে স্বল্প খরচে কর্মস্থল ও নিজ নিজ বাসস্থানে যাতায়াত করে থাকে। কিন্তু নারীদের জন্য সরকারের এত উন্নয়নের কার্যক্রম গ্রহণের পরেও গণপরিবহনে নারীর প্রতি যৌন হয়রানির ঘটছে।”
গণপরিবহনে যাতায়াতকালে নারীরা অসম্মানজনক আচরণেরও শিকার হচ্ছেন। যার ফলে সভ্যতার এযুগে নারীরা চলাচলের ক্ষেত্রে নিরাপত্তার অভাব বোধ করছেন। এসব ঘটনা তাদের স্বাধীন চলাচলকে বাধাগ্রস্ত করছে। গণপরিবহনে এশিয়ার অন্যান্য দেশের নারীরা নিপীড়নের শিকার হয়ে থাকে।
প্রতিমন্ত্রী ইন্দিরা আরও বলেন, “বঙ্গবন্ধু ১৯৭৩ সালে প্রথম বাংলাদেশে কর্মজীবী নারী ও শিক্ষার্থীদের জন্য পৃথক বাস চালু করেন। আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে দেশের সকল গণপরিবহন নিরাপদ ও নারী বান্ধব করে তুলছে। শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় থাকলে নারীরা নিরাপদ থাকে। নারীর উন্নয়ন, ক্ষমতায়ন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়।”
তিনি বাস মালিক সমিতির উদ্দেশে বলেন, “চালকদের নিয়োগদানের পূর্বে তাদের সম্পর্কে নিশ্চিত হতে হবে যেন তারা অপরাধ করলে তাদের দ্রুত শনাক্ত করা যায়। যাত্রীদের সঙ্গে গাড়ির চালক ও স্টাফদের উত্তম আচরণ কেমন হবে, সে ব্যাপারে প্রশিক্ষণ দিতে হবে।”
মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. হাসানুজ্জামান কল্লোলের সভাপতিত্ব অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আগা খান মিন্টু। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা, বাস মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ, বাসচালক, স্টাফ, হেলপার যাত্রীসহ পরিবহনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা।
উদ্বোধনী দিনে ৫টি বাস কোম্পানি ও ভিন্ন রুটের মোট ১০৮টি বাসে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। বাসগুলো হলো চন্দ্রা টু ডেমরা স্টাফ কোয়ার্টার রুটের রাজধানী সুপার সার্ভিস লিমিটেডের পঁচিশটি, গাবতলী টু গাজীপুর রুটের বসুমতি ট্রান্সপোর্ট লিমিটেডের পঁচিশটি, মোহাম্মদপুর টু আব্দুল্লাহপুর রুটের প্রজাপতি পরিবহন লিমিটেডের পঁচিশটি। ঘাটারচর টু আব্দুল্লাহপুর রুটের পরিস্থান পরিবহনের রয়েছে পঁচিশটি এবং গাবতলী টু সায়েদাবাদ রুটের গাবতলী এক্সপ্রেসের আটটি বাসে প্রাথমিক পর্যায়ে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। সরকারের অর্থায়নে কর্মসূচিটি বাস্তবায়ন করছে বেসরকারি সংস্থা দীপ্ত ফাউন্ডেশন।
সূত্র: ইউএনবি